একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি। গতকাল শুক্রবার বিকালে লিখিতভাবে তিনি একথা জানিয়ে দিয়েছেন কাশিমপুরের কারা কর্তৃপক্ষকে। আর মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়শা খাতুন জানিয়েছেন,‘মীর কাসেমের ইচ্ছ’ মৃত্যুর পর তার নামাজে জানাজা যেন পড়ায় ছেলে মীর আহমদ।
গত ৯ আগস্ট থেকে ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান) নিখোঁজ। মীর কাসেম আলীর পরিবারের অভিযোগ, তার বড় ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে আর কেউ তার সন্ধান দিচ্ছেন না। কে বা কারা তুলে নিয়ে গেলো তা স্বীকারও করছে না। মীর আহমদ বাবা কাসেমের ‘ডিফেনসিভ ল’ দেখতেন। নিজস্ব আইনজীবীদের একজন ছিলেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার কাশিমপুরের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, কারা কর্মকর্তারা শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো মীর কাসেম আলীর কাছে যান প্রাণভিক্ষার আবেদনের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত জানতে। মীর কাসেম আলী লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না। পরবর্তীতে তার এই চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দীন।
এদিকে আজ শনিবার দুপুর ১ টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মীর কাসেম আলীর ফাঁসি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই যথা সময়ে কার্যকর করা হবে।
অপরদিকে ফাঁসি কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ হিসেবে কারা বিধি অনুযায়ী স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন এবং কারা মহা-পরিদর্শকের কাছে অবহিতকরণ চিঠি পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। একই চিঠি পাঠানো হয়েছে মীর কাসেমের গ্রামের বাড়িতে। কারাগারে পৌঁছেছে জল্লাদরাও।
লাল খামে ভরে আজ শনিবার সকাল ১১টায় বিশেষ কারা বার্তাবাহকের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো হয়। কারাগার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অতিরিক্ত কারা মহা-পরিদর্শক কর্নেল ইকবাল কবির দুপুর দেড়টার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেছেন। তিনি ফাঁসির প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কারা সূত্র আরো জানায়, মঙ্গলবার আপিল রিভিউর আবেদন খারিজ করে দেয়ার পর রায়ের কপি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ঐ দিনই তার মুত্যৃ পরোয়ানা জারি করা হয়। লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হয়ে রাত পৌনে একটায় কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়। বুধবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষ মীর কাসেম আলীকে রায় খারিজ এবং মৃত্যু পরোয়ানা জারির খবর জানায়। শুক্রবার বিকেলে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করবেন না জানালে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তারই অংশ হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার সকালে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন ও মীর কাসেম আলীর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় পরিবারকে চিঠি পাঠিয়ে অবহিত করা হয়।
জানা গেছে, মীর কাসেম আলীর ফাঁসির প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পালন করবেন জল্লাদ শাহজাহান ভুঁইয়া। তাকে সহায়তা করবেন রাজুও কামালসহ আরো চার জল্লাদ। শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজুকে কাসিমপুর হাইসিকিউটি কারাগার থেকে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এ নেয়া হয়েছে।
এছাড়াও সাক্ষাতের জন্যে মীর কাসেম আলীর পরিবারের সদস্যদেরও বিকেল সাড়ে তিনটার মধ্যে কারাগারে আসতে বলা হয়েছে। পরিবারের ২৮ সদস্য সাক্ষাৎ করতে ঢাকার বাসা থেকে রওনা হয়েছেন বলেও জানা গেছে।
No comments:
Post a Comment