হিমালয়ের রহস্যময় প্রাণী
হিমালয়ের দুর্গম তুষারবৃত উঁচু এলাকায় নাকি রয়েছে এক রকমের মানবাকৃতির প্রাণী, যাকে আমরা ইয়েতি বা তুষার মানব নামে জানি।
হিমালয়ের দুর্গম তুষারবৃত উঁচু এলাকায় নাকি রয়েছে এক রকমের মানবাকৃতির প্রাণী, যাকে আমরা ইয়েতি বা তুষার মানব নামে জানি।
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে একদল চৈনিক শিকারী জানায় ইয়েতির কথা। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কর্ণেল সি.কে হাওয়ার্ড বেরী এর অধিনায়কত্বে তিব্বতের মধ্য দিয়ে এভারেষ্ট অভিযানকালে কর্ণেল সঙ্গীদের নিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় বিশ হাজার ফুট উপরে খারতা হিমবাহের কাছাকাছি কয়েকটি বিশাল আকৃতির মানুষের পায়ের ছাপের মতো পদচিহ্ন দেখতে পান।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে এভারেষ্ট অভিযাত্রী ব্রিটিশ মেজর আলান ক্যামেরন হিমালয়ের হিমরেখার উর্ধ্বে খাড়াই শৈল প্রাচীরের গা ঘেসে সঙ্কীর্ণ পথে সারিবদ্ধ মানবাকৃতি প্রাণীর একটা দলকে মন্থর গতিতে চলতে দেখেছিলেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ফ্রাঙ্ক স্মিদি তিব্বত গিয়ে ১৪ হাজার ফুট উঁচুতে এই প্রাণীর অতিকায় পদচিহ্ন দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি পদচিহ্নগুলোর মাপ নিয়ে দেখেছিলেন সেগুলো লম্বায় ছিল প্রায় ১৩ ইঞ্চি আর চওড়ায় ছিল প্রায় ৫ ইঞ্চি।
১৯৫০ খ্রিঃ নেপালের প্যাঙবোচি অঞ্চলে একটা মমীকৃত হাতের তর্জনী আর খানিকটা চামড়া পাওযা গেলেও বিজ্ঞানীরা তা পরীক্ষা করে ইয়েতি জাতীয় প্রাণীর সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেন।
১৯৫১ খ্রিঃ এক হিমালয় অভিযাত্রী এরিক শিপটন একই ধরণের পদচিহ্ন দেখতে পেয়ে তার ছবি তুলে নিয়ে আসেন এবং সংবাদপত্রে সেই ছবি ছাপা হলে পৃথিবীতে আরো একবার আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই ছবি দেখে বিজ্ঞানীরা নানা যুক্তি দেখালেও তখন তেমন কোনো সিদ্ধান্তে তারা আসেননি।
১৯৫৮ খ্রিঃ নাগাদ পাওয়া গেল ইয়েতি নামক রহস্যজনক তুষারমানবের অস্তিত্বের অবিসম্বাদিত প্রমাণ। ডক্টর নরম্যান ডাইরেনফার্য নামে একজন আমেরিকান তথ্যানুসন্ধানী এবং মার্কিন অভিযাত্রী মি. ম্যাকনিল এর আনা বিভিন্ন প্রমাণ থেকে জানা যায় ইয়েতিদের মধ্যে দুটো প্রজাতি আছে, একদল লম্বায় ৮ ফুট এবং আর একদলের উচ্চতা চার ফুটের কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা এই প্রমাণ উপেক্ষা করতে না পারলেও ইয়েতির সঠিক পরিচয় নির্ণয় করতে পারলেন না। ১৯৬২ সালে এভারেষ্ট বিজয়ী এডমন্ড হিলারিও পর্বতারোহন কালে নেপালের পূর্ব প্রান্তে মাকালু এবং রোলওয়ালিং পর্বতশৃঙ্গে তুষারের গায়ে ইয়েতির পদচিহ্ন দেখতে পেয়ে ছিলেন।
১৯৬৪ খ্রিঃ এর অভিযাত্রী পিটার টেলর এর বিষ্ময়কর নতুন আবিষ্কার ইয়েতির বিশালাকৃতির পায়ের ছাপ। আকৃতিতে যেগুলো ছিল কুকুর জাতীয় কোন চতুষ্পদ প্রাণীর পায়ের ছাপের মতো। কিন্তু হিমালয় অঞ্চলে এখনো পর্যন্ত ইয়েতির কোন মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়নি। হিমালয় ছাড়াও পৃথিবীর প্রায় সকল দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলেই ইয়েতির মতো প্রাণীর অস্তিত্বের খবর পাওয়া গেছে।
ইয়েতিদের সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা ওপ্রমাণ পাওয়া গেলেও এদের প্রকৃত পরিচয় এখনো অজ্ঞাত রয়েছে। হিমালয় থেকে রকিজ পর্যন্ত এবং গোবি মরুভূমি থেকে দক্ষিণ ইলিয়ন পর্যন্ত ইয়েতি দানবদের রহস্য আজ পর্যন্ত রহস্যই রয়ে গেছে।
No comments:
Post a Comment