২ টাকার ফটোকপির জন্য হাজার টাকা ঘুষ | তাহলে কি ছিল ওই ফটোকপিতে? - সময়ের প্রতিধ্বনি

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, September 7, 2016

২ টাকার ফটোকপির জন্য হাজার টাকা ঘুষ | তাহলে কি ছিল ওই ফটোকপিতে?


দুনিয়াতে গিভ অ্যান্ড টেক ছাড়া কিছু হয় না। বুঝলেন? আপনি যদি কারো জন্য কিছু না করেন, তাহলে অন্য কেউ আপনার জন্য কেন করবে? সারাজীবন এই থিওরিটি মনে রাখবেন। এই থিওরি কিন্তু সাংঘাতিক জিনিস। তাহলে কোথাও আটকাতে হবে না। একটু চা-পানি খাওয়ানো আর কী। আল্লাহ ছাড়া সবাই এইটা খায়। ঘুষ খায় না এমন মানুষ আছে নাকি?’
ঘাড় নাড়িয়ে হাত দোলাতে দোলাতে ঠিক এভাবেই নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেন মো. জাকির হোসেন। বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিসের লাইব্রেরিয়ান তিনি। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করতে পারেন না। মাত্র ২ টাকার এক পৃষ্ঠা ফটোকপির জন্য জাকির হোসেন নেন ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। আর এ কাজে তার সহযোগী লাইব্রেরির অফিস সহকারী আব্দুস সালাম। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে চরম ভোগান্তি শেষেও কাক্সিক্ষত সেবা মেলে না। শুধু লাইব্রেরিতে নয়, এ অফিসটির অন্য শাখাতেও টাকা ছাড়া কাজ হয় না। গত দেড় সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিসে আমাদের সময়ের সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ চিত্র। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা অফিস। কেপিআইভুক্ত সরকারি এ অফিসে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গেজেট, সার্ভিসবুক, ফরমের মূল কপি এবং ফটোকপি সরবরাহসহ নানা সেবা প্রদান করা হয়। অফিসটির নিচতলায় রয়েছে গেজেট ও ফরমসহ সরকারি নানা প্রকাশনা বিক্রির বড় আকৃতির কক্ষ। এখানে প্রতিটি কপি নিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। অফিসটির দ্বিতীয় তলার ডানপাশেই লাইব্রেরি। নিচে সরকারি প্রকাশনা বিক্রির কক্ষে যেসব জিনিস পাওয়া যায় না সেগুলোর সবই মেলে এখানে। তবে এখান থেকে মূল কপি নেওয়া যায় না। শুধু ফটোকপি নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত প্রতি পৃষ্ঠা ফটোকপির দাম রাখার কথা ২ টাকা। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এখান থেকে ফটোকপি নিতে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। সেই আবেদন অফিসটির উপপরিচালক আলমগীর হোসেন অনুমোদন দিলেই কেবল ফটোকপি নিতে পারবেন আপনি। তবে ঘুষ দিলে এসব করে দেওয়ার লোক আছে; না দিলে ঘুরে ঘুরে হয়রানিরই শিকার হতে হয় কেবল। কাজের কাজ কিছুই হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই লাইব্রেরিতে ফটোকপি সেবা নিতে প্রতিদিন ১৫-২০ জন আসেন। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেই বাড়তি ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ রাখা হয়। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ঘুষ লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ টাকার ভাগ যায় আরও ওপরেÑ এমনই জানিয়েছেন এখানকার একজন কর্মচারী। এ ছাড়া অফিসের অন্যান্য বিভাগের চিত্রও অভিন্ন। টাকা ছাড়া কেউ কাজ করেন না। ২৯ আগস্ট দুপুর দেড়টা। এরই মধ্যে লাইব্রেরিয়ান জাকির হোসেন বাসায় চলে গেছেন। লাইব্রেরির একপাশে সাদা কাগজে লেখা ঝুলছেÑ ওয়ান স্টপ সেন্টার। অফিস সহকারী আব্দুস সালাম সেবাপ্রার্থী একজনকে দুই পাতা ফটোকপি করে এনে দিলেন। বিনিময়ে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নিলেন ৭৫০ টাকা। অফিসের নিচে নামতেই এ প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে বাড়তি টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, ভাই আগে বেশ কয়েকবার এসেছিলাম। ছোট্ট একটা কাজ। ইনারা করেই দেন না। পরে বাধ্য হয়ে ঘুষ দিতে হলো। হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি। ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ রাখতে এ প্রতিবেদক নিজের পরিচয় গোপন করে ১৯৯০ সালের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগের গেজেটের ফটোকপি আনতে যান ওই লাইব্রেরিতে। কিন্তু গত দেড় সপ্তাহেও সেটি নানা বাহানায় দেয়নি কর্তৃপক্ষ। অবশেষে গতকাল দুপুরে এক হাজার টাকার বিনিময়ে মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে দুই পাতার গেজেটের ফটোকপিটি এনে দেন। লাইব্রেরিয়ান জাকির হোসেন ও অফিস সহকারী আব্দুস সালাম চক্ষুলজ্জা না রেখে এমন ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করলেন। তাদের কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে আমাদের সময়ের কাছে। গতকাল দুপুরে আমাদের সময়ের সঙ্গে সেবাপ্রত্যাশী আরও দুজনের কথা হয়। তাদের মধ্যে একজন তিন পাতা ফটোকপির জন্য দেন ৬০০ টাকা। আরেকজন দুই পাতা ফটোকপির জন্য দেন ৯০০ টাকা। সেবাপ্রত্যাশী ব্যক্তিরা বলেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সেবা প্রদান করা হয় এখান থেকে। কিন্তু বাড়তি টাকা না দিলে যেভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লাইব্রেরিয়ান জাকির হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এখানে কোনো ঘুষ লেনদেন হয় না। আপনার কাছে কেউ বাড়তি টাকা চেয়েছে? এই প্রতিবেদক নিজে দুপুরে তার সামনে ঘুষের টাকা দিয়েছেন এমন কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও কিছুতেই তা মনে করতে পারলেন না তিনি। জাকির হোসেন জানান, দুই সন্তানের জনক তিনি। একজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে, অন্যজন মেডিক্যাল কলেজে পড়ছেন। এই চাকরি করে সবকিছু সামলাচ্ছেন তিনি।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages