বেকারের ৪০ শতাংশই শিক্ষিত - সময়ের প্রতিধ্বনি

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Thursday, April 12, 2018

বেকারের ৪০ শতাংশই শিক্ষিত



  • প্রতি পাঁচজন বেকারের মধ্যে দুজন উচ্চমাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী।
  • মনমতো চাকরি পাচ্ছেন না।


লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে-ছোটবেলায় এই ছড়াটি শোনেনি এমন শিশু পাওয়া কঠিন। লেখাপড়া করে চাকরি পাবে, ভালো রোজগার করে উন্নত জীবনযাপন করবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি কি জানেন, বাংলাদেশে শিক্ষিত মানুষেরাই বেশি বেকার। তাঁরা নিজেদের পছন্দমতো কাজ পান না। অন্যদিকে যাঁরা কখনো স্কুলে যাননি, শিক্ষার সুযোগ পাননি; তাঁদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম।

বাংলাদেশে যত লোক বেকার, তাঁদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে দুজন উচ্চমাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। পড়াশোনা করে একটু ভালো কাজের সন্ধানে থাকেন তাঁরা। কিন্তু মনমতো চাকরি পাচ্ছেন না। আবার হয়তো যে পদে চাকরি পান, সেখানে যোগ দিতে অনীহা আছে তাঁদের।

সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে সারা দেশে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার বেকার লোক আছেন। তাঁরা সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজের সুযোগ পান না। এই বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার তরুণ-তরুণী উচ্চমাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেও চাকরি পাচ্ছেন না। বেকারদের মধ্যে ৩৯ শতাংশই এমন শিক্ষিত বেকার। অন্যদিকে যাঁরা পড়াশোনা করতে পারেননি, মোট বেকারদের মধ্যে তাঁদের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১১ দশমিক ২ শতাংশ।

এবার আসা যাক, ডিগ্রিধারীদের নিজেদের মধ্যে বেকারত্বের হার কেমন সেই চিত্রে। শ্রমশক্তি ২০১৬-১৭ জরিপে বলা হয়েছে, উচ্চমাধ্যমিক পাস তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি প্রায় ১৫ শতাংশ। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ৬ লাখ ৩৮ হাজার তরুণ-তরুণী কোনো কাজ পাননি। তাঁরা আর পড়াশোনা করতে চান না, কাজ করতে চান। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ৪ লাখ ৫ হাজার লোক এখনো পছন্দ অনুযায়ী কাজ পাননি। স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ১১ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি, এমন মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ৩ লাখ।

শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রাথমিক পাস করা বেকার আছে ৪ লাখ ২৮ হাজার। প্রাথমিক পাস করাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। মাধ্যমিক পাস বেকারের সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। তবে মাধ্যমিক পাস করাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন ছড়ার মতো বলেন, ‘লোক বলে কাজ কই, আর কাজ বলে লোক কই’। তাঁর মতে, এ দেশে কাজের চাহিদা আছে, কিন্তু দক্ষ লোক নেই। একধরনের চাহিদা ও জোগানের ফারাক আছে।

জাহিদ হোসেন বলেন, শিক্ষিতরা যেনতেন কাজ করতে চান না। একদম মেশিন চালানোর মতো কাজে তাঁদের অনীহা আছে। তাঁদের শিক্ষা আছে, কিন্তু শিক্ষার মান খারাপ, দক্ষতা খুব বেশি নেই। অনেকে চাকরির দরখাস্ত পর্যন্ত করতে পারেন না। চাকরিদাতা এমন লোকদের চাকরি দিয়ে বোঝা তৈরি করতে চান না। আবার একই চাকরিদাতারা বিদেশ থেকেও লোক এনে কাজ করাচ্ছেন। এর মানে, চাহিদা আছে কিন্তু দেশে দক্ষ লোকের অভাব আছে। তাই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হলে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে।

বিবিএস আরও বলেছে, বেকার জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। এই সংখ্যা ২১ লাখ ৩১ হাজার। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ আছেন ৬ কোটি ৩৫ লাখ। তাঁরা কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকেন। তবে এই হিসাবে, পড়াশোনা করেন কিংবা অসুস্থ কিংবা অন্য কোনো কারণে কাজের জন্য প্রস্তুত নন; তাঁরা এই শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হন না। তবে তাঁদের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ লোক।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages