আমাদের এই প্রকৃতিতে কী নেই? রহস্য, বিস্ময়, সৌন্দর্য, বৈচিত্রতা- সবকিছুই আছে। এদের সবার সহাবস্থানের কারণেই আমরা প্রকৃতিকে এতো ভালোবাসি, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকতে উতলা হয়ে উঠি। প্রকৃতির কিছু কিছু রহস্য যেমন আমাদের অবাক করে দেয়, তেমনিভাবে কিছু কিছু সৌন্দর্যও আমাদের বিস্মিত করে তোলে।
ফুলকে আমরা সৌন্দর্যের প্রতীক বলে জানলেও পৃথিবীতে এমন কিছু ফুল আছে, যাদের দেখে মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি রীতিমতো বিস্মিত হতে হয়! তেমনি কিছু ফুল নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন-
বানরমুখো অর্কিড: ফুলের নামটা প্রথম শুনে থাকলে যে কেউ চমকে যেতে বাধ্য। বানরের স্থান হল বনে-জঙ্গলে, গাছের মগডালে। কিন্তু সেই বানর যদি অবস্থান নেয় অর্কিড জাতীয় ফুলে, তাহলে তো চমকে যাবারই কথা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি ইকুয়েডর ও পেরুর পাহাড়ি জঙ্গলে এমন এক অর্কিড জাতীয় ফুল পাওয়া গেছে যার মুখ দেখতে হুবহু বানরের মতো।
ফুলটির নামও রাখা রয়েছে তার গঠন অনুসারে- ‘মানকি অর্কিড’ বা ‘বানরমুখো অর্কিড’। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী লুইয়ার ১৯৭৮ সালে বানরমুখো অর্কিড আবিষ্কার করেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘Dracula simia’। পাকা কমলার ঘ্রাণযুক্ত এই অর্কিড সারা বছরই জন্মাতে পারে।
এখন পর্যন্ত এর প্রায় ১২০ টি প্রাজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। ফুলটি দেখতে যে শুধুমাত্র বানরের মত, তা কিন্তু নয়। বানর যেমন গাছের মগডালে থাকতে পছন্দ করে, তেমনি বানরমুখো অর্কিডও মাটি থেকে ১০০০-২০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থান করে।
নাচুনি অর্কিড: পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও স্নিগ্ধ বস্তু হল ফুল। সেই ফুল যদি আবার নাচিয়ে বালিকার ভঙ্গিতে অবস্থান করে, তখন তা যে কারো নজর কেড়ে নিতে সক্ষম। অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য এই ফুলটির দেখা মেলে আফ্রিকার গহিন অরণ্যে। ফুলটির স্থানীয় নাম ড্যান্সিং গার্ল অর্কিড এবং বৈজ্ঞানিক নাম ‘Impatiens bequaertii’.
ফুলসহ নাচুনি অর্কিড গাছের দৈর্ঘ্য মাত্র দেড় ফুট। সাদা বা হালকা গোলাপি রঙের এই ফুলটির পাপড়িগুলো দুই পাশে ছড়ানো অবস্থায় থাকে। তাই একে দেখলে মনে হয় যেনো কোন তরুণী নাচের ভঙ্গিতে দাঁড়িতে আছে। বিরল প্রাজাতির এই ফুলটি সারাবছরই ফুটে থাকে।
হাস্যমুখী এলিয়েন: চার্লস ডারউইন তাঁর দক্ষিণ আমেরিকায় সমুদ্রযাত্রার সময় আবিষ্কার করেন অদ্ভুত সুন্দর এই ফুলটি। তাঁর নামানুসারে ফুলটির নাম দেওয়া হয় ডারউইন’স স্লিপার ফ্লাওয়ার। ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম Calceolaria uniflora. ইংরেজিতে একে হ্যাপি এলিয়েন বা হাস্যমুখী এলিয়েন নামেও অভিহিত করা হয়।
শিলার উপর সারি সারি জন্ম নেওয়া এই ফুলগুলো দেখলে মনে হবে যেনো কমলা রঙের পেঙ্গুইন দল মার্চ করছে। কিন্তু ফুলটির কাছে গিয়ে একটু ভালোভাবে তাকালে চোখে পড়বে ফুলটির অন্য এক সৌন্দর্য!
ফুলটির গঠন দেখে মনে হবে একটি এলিয়েন হাসিখুশি চেহারা নিয়ে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চিরহরিৎ ও বহুবর্ষজীবী হাস্যমুখী এলিয়েনের জন্য প্রয়োজন শীতল জলবায়ু। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে এরা ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে না।
ফ্ল্যাইং ডাক অর্কিড: ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এই অর্কিডটি দেখে যে কেউ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান যে এটি আসলে ফুল না কোন উড়ন্ত হাঁস। হাঁসের মত ঠোঁট ও ডানা রয়েছে ফ্ল্যাইং ডাক অর্কিডের।
এটি গাছে এমনভাবে অবস্থান করে যে দেখে মনে হয় কোন হাঁস উড়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উড়ন্ত হাঁসের মত দেখতে এই অর্কিডটি পুরোপুরি বন্য। এদের দেখা মেলে কুইন্সল্যান্ড, দক্ষিন অস্ট্রেলিয়া ও তাসমানিয়ায়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Caleana major.
হুকার্স লিপস: মানুষের ঠোঁটের মত দেখতে এই ফুলটির নাম হল হুকার্স লিপস। টকটকে লাল হুকার্স লিপস দেখতে হুবহু মেয়েদের লিপস্টিক দেওয়া লাল ঠোঁটের মত। কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, পানামা প্রভৃতি দেশে এই ফুলের দেখা মেলে। সৌন্দর্যের পাশাপাশি লাল ঠোঁটের গঠন এই ফুলটিকে পরাগায়নেও সাহায্য করে থাকে। তবে হুকার্স লিপস এর এই বিশেষ গঠন খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। পুরোপুরি পাঁপড়ি মেললে ঠোঁটের গঠন মিলিয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment