শাঁ শাঁ শব্দে শুভ্র জলের এক নতুন অদ্ভুত অপ্সরীর দেখা মিলেছে। মেঘালয়ের গহীন অরণ্যের কোলে বাংলাদেশের পানে রূপের মাধুরী ফেলেছে অপরূপা এক জলপ্রপাত। নয়নাভিরাম, নান্দনিক, অপূর্ব, হৃদয়স্পর্শী সবগুলো শব্দই এই নামের সঙ্গে লাগালেও এর সৌন্দর্যের বিশ্লেষণ শেষ হবে না ।
বাংলাদেশেই যে এত চমৎকার একটি গ্রাম আছে তা অনেকেরই অজানা । রূপের শহর, রূপের নগরী বলে অনেক শহরেরই খেতাব আছে । কিন্তু বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশের ছোট্ট একটি অনিন্দ্য সুন্দর গ্রামের কোন খেতাব নেই ।
এ পর্যন্ত যারাই দেখেছেন, পাহাড়ী নদীর চোখ ধাঁধানো নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নদীটির নাম দিয়েছেন মায়াঝর্ণা, কেউ অভিভূত হয়ে চিৎকার তুলেছেন এ তো মায়াবতী! কারও নয়নে লেগেছে ঘোর। আবার কেউ আনমনা হাবুডুবু খেয়েছে পাহাড়ের বুক-চেরা এই প্রেমদাত্রী ঝর্ণার প্রেমে।
একেবারে অপরিচিত এবং পর্যটকদের অজানা থাকায় এই রূপবতীর রূপ দর্শনে এখনও সেখানে তেমন ভিড় নেই। তাই প্রভাত সূর্যের কিরণে কিংবা বিকেলের গোধূলীতে ঘোমটা ছাড়াই অপরূপ মায়াজালে বাধে তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন-বর্ণা! এই ঝর্ণা। সীমান্ত নামের শক্ত দেয়াল এই সৌন্দর্য্যকে আড়াল করতে পারেনি।
বাংলাদেশের কোল ঘেঁষে প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয়ের গহীন অরণ্যের কোলে নেমেছে অপরূপ এই ঝরনাধারা। ঝরনাটির স্থানীয় নাম ফাটাছড়ির ঝরনা; কেউ কেউ আবার বড়হিল ঝরনা বলেও ডাকেন। ঝরনাটি ভারতের মধ্যে পড়লেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে দেখা যায়। পাশেই বিএসএফের ক্যাম্প। বরইগাছের সারি দিয়ে এখানে দুই দেশের সীমানা ভাগ করা। এখানে বিজিবির কোনো চৌকি নেই। তাই সীমানার কাছাকাছি যাওয়া বিপদজনক। দেখতে সুন্দর বলে, সব ঝর্না গুলাই ভারত নিয়ে গেছে।
মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সিলেট জেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের এই পানতুমাই গ্রামকে বলা হয় বাংলাদেশ এর সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম । যদিও অনেকে একে “পাংথুমাই” বলে, কিন্তু এর সঠিক উচ্চারণ “পানতুমাই”।
পাহাড় ঘেঁষা আঁকাবাঁকা রাস্তা পানতুমাই গ্রামের বৈশিষ্ট্য। গ্রামের শেষে পাহাড়ি গুহা থেকে হরিণীর মতোই লীলায়িত উচ্ছল ভঙ্গিমায় ছুটে চলেছে সঠিক নাম না জানা এই ঝরনার জলরাশি। ছিটকে পড়ে মেলে ধরছের রূপের মাধুরী।
অনেক আগে ঝরণার কাছে যাওয়া যেত। গোসল করা যেত, বিএসএফ এর ক্যাম্প ছিল না। কিন্তু বাঙালী আর খাসিয়া মারামারি হওয়ার কারণে এখন যাওয়া নিষেধ। তবে নিরাপদ দূরত্ব রেখে এর অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করা যাবে।
কিভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন ?
সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে যাবেন গোয়াইনঘাট থানা সংলগ্ন বাজারে । ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা । সেখান থেকে আরেকটি সিএনজি-তে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পাংথুমাই বা পানতুমাই যেতে ভাড়া লাগে মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ।
পানতুমাইয়ে কোনো খাবার হোটেল বা থাকার ব্যবস্হা নেই সুতরাং শুকনা খাবার অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে । রাতে থাকতে চাইলে স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে থাকতে পারবেন । এক্ষেত্রে আপনার ২০০-৩০০ টাকা ব্যয় হতে পারে ।
No comments:
Post a Comment