মা-বাবাকে বিয়ে দিল কিশোর ছেলে - সময়ের প্রতিধ্বনি

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Friday, September 16, 2016

মা-বাবাকে বিয়ে দিল কিশোর ছেলে

বাবা-মায়ের ঝগড়া হয়েছিল। ভেঙে গিয়েছিল সংসার। মনের দুঃখে নানু বাড়ি থেকে পালিয়েছিল ছেলেটিও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারই জেদে জোড়া লাগল ঘর। সন্তানের মুখ চেয়ে আবার এক হলেন বাবা-মা।

ঘটনার শুরু ১৪ বছর আগে। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুরুলিয়ার জয়পুরের বাসিন্দা সানাউল্লা আনসারির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের জাহিদা খাতুনের। সাংসারিক খিটিমিটির জেরে বিয়ে ভাঙল চার বছরের মাথায়।

কিন্তু তত দিনে কোলে এসে গিয়েছে আফতাব। ছোট্ট শিশুর চোখের সামনেই আলাদা হয়ে গেলেন বাবা-মা। মায়ের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার বারকি-তে চলে গিয়েছিল আফতাব। নানু বাড়িতে শুরু হয়েছিল তার নতুন জীবন।

নানু বাড়িতে কেটে গিয়েছিল বেশ কয়েকটা বছরও। কিন্তু আফতাবের মনের দুঃখ সারেনি। এখন তার বয়স ১৩। ফেব্রুয়ারি মাসে এক দিন বকুনি খেয়ে অভিমানে ঘর ছাড়ল সে।

আদ্রা স্টেশনে তাকে একা একা ঘুরে বেড়াতে দেখে যখন উদ্ধার করল রেল পুলিশ, মুখে কুলুপ এঁটেছিল আফতাব। তার ঠাঁই হল আদ্রার অরুণোদয় শিশু নিকেতন হোমে। সেখানেই স্কুলে পড়াশোনা শুরু করল সে।

হোমের সম্পাদক নবকুমার দাস জানান, মার্চের মাঝামাঝি আফতাব এক দিন তাদের কাছে বাড়ির সব কথা খুলে বলে। ঠিকানা পেয়ে তারা খবর দেন আফতাবের নানু আতাবউদ্দিনকে। আসেন মা জাহিদাও। কিন্তু অভিমানে মায়ের সঙ্গে প্রথমে কথা বলেনি আফতাব। চায়নি ফিরে যেতে।

তখন আতাবউদ্দিনের কাছ থেকে সানাউল্লার ঠিকানা নিয়ে ডেকে পাঠানো হয় তাকেও। বাবা এবং মা আলাদাভাবে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করেন।

আবেদনপত্র পৌঁছয় জেলা প্রশাসকের কাছে। কিন্তু এবার বেঁকে বসে খোদ আফতাবই। গোঁ ধরে, বাবা-মা যদি একসঙ্গে থাকেন, তবেই বাড়ি ফিরবে। হোম কর্তৃপক্ষ জাহিদা এবং সানাউল্লাকে একসঙ্গে বসিয়ে কথাটা জানান।

প্রথমে চমকে উঠেছিলেন দুজনেই। পুরনো দিনের কথা তুলে এক প্রস্ত ঝগড়াও হয় দুজনের মধ্যে। তার পরে একটু একটু করে বরফ গলে।

গত ৬ জুন আদ্রারই গোপীনাথপুরের একটি মসজিদে ফের বিয়ে করেন সানাউল্লা-জাহিদা। কারণ, বিচ্ছেদের পর জাহিদা ২০০৮ সালে আরেকটি বিয়ে করেন। সেজন্য নতুন করে তাদের বিয়ে করতে হয়।

বিয়ের পরে রঘুনাথপুর কোর্টে গিয়ে বিবাহের ঘোষণাপত্র তৈরি করেন জাহিদারা। দুজনে একসঙ্গে সেই নথি নিয়ে আবেদন করেন ছেলেকে ফিরে পেতে। মাস তিনেক তাদের মিলেমিশে সংসার করার প্রমাণ মেলার পরে জেলা প্রশাসক তন্ময় চক্রবর্তী আফতাবকে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশপত্রে সই করেন।

দম্পতির দাবি, আফতাবই তাদের ভাবতে বাধ্য করেছে কোনটা বড়- সন্তানের হাসিমুখ না নিজেদের দূরত্ব? মনের টান যে দিকে গিয়েছে, তারা সানন্দে এগিয়েছেন সে দিকে।

শেষ পর্যন্ত সত্য হলো জনপ্রিয় সিনেমার সংলাপ, 'স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হতে পারে, মা-বাবার বিচ্ছেদ হয় না।'

এখন আর কিছু ভাবছে না আফতাব। এবার বাবা-মা বকলে কী হবে? মুচকি হেসে কিশোর বলল, 'যা-ই করি, বাড়ি ছেড়ে পালাব না!'

সূত্র: আনন্দবাজার।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages