মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গোয়েন্দা সংস্থা যৌথ নজরদারি - সময়ের প্রতিধ্বনি

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, August 23, 2016

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গোয়েন্দা সংস্থা যৌথ নজরদারি


মোবাইল ব্যাংকিংসহ মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য সামনে রেখে জঙ্গি অর্থায়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে নজরদারি শুরু করছে।
পুলিশের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরে বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক লেনদেন হচ্ছে মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায়। এ ব্যবস্থায় মোট লেনদেনের প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ ক্যাশ আউট বা উত্তোলনের হিসাবও ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সন্দেহজনক লেনদেন বন্ধ করতে এজেন্টদের ওপর বিশেষ নজর রাখতে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব তদন্ত এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি আরও বলেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যাচাইয়ের মাধ্যমে সিমকার্ড নিবন্ধনের আগে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে সিমকার্ডের প্রকৃত মালিক নির্ধারণ করা কঠিন ছিল। এ কারণে বেশ কিছু অনিয়মসহ সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়টি চিহ্নিত করতেও সমস্যা হয়েছে। নতুন করে সিমকার্ড নিবন্ধনের পর এ জটিলতা অনেকটা কমে গেছে এবং নজর রাখতেও সুবিধা হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে সন্দেহজনক লেনদেন কমবে বলে তিনি মনে করেন।
পুলিশের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে যা আছে: পুলিশের ফরেনসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে প্রস্তুত করা ওই প্রতিবেদনে তিন মাসের লেনদেনের চিত্র দেখানো হয়। এতে দেখা যায়, এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমে ১০ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকার ‘ক্যাশ আউট’ বা নগদ টাকায় উত্তোলন করা হয়। অথচ এ সময়ে ব্যক্তি গ্রাহক থেকে ব্যক্তি গ্রাহক ও বাণিজ্যিক মাধ্যম থেকে গ্রাহক পর্যায়ে অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্টে মোট লেনদেন হয় পাঁচ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ব্যবহৃত সূত্র অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্টে লেনদেনের মোট পরিমাণের চেয়ে ক্যাশ আউটের পরিমাণ কখনই বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তিন মাসের লেনদেনের হিসাব পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্টে মোট লেনদেনের চেয়ে ক্যাশ আউটের পরিমাণ চার হাজার ৭৪০ কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ ক্যাশ আউট বা নগদ টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে এই চার হাজার ৭৪০ কোটি টাকা কীভাবে লেনদেন হয়েছে, তা রেকর্ডের বাইরে থেকে যাচ্ছে। প্রতিবেদনের এই লেনদেনকেই সন্দেহজনক লেনদেন উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন মাসে চার হাজার ৭৪০ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেন হলে বছরে সন্দেহজনক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে একাধিক কেস স্টাডি উল্লেখ করে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমে অ্যাকাউন্ট ছাড়াই বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনিয়ম করছেন এজেন্টরা। তারা একাধিক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খুলে তার মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট না থাকা অনেকের টাকা পাঠান কিংবা গ্রহণ করেন। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নির্ধারিত অঙ্কের চেয়ে বেশি অঙ্কও লেনদেন করা হচ্ছে। একটি কেস স্টাডিতে দেখা যায়, কোনো অ্যাকাউন্ট ছাড়াই প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে, যেখানে এজেন্ট তার একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তেও সন্দেহজনক লেনদেন: সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে দেখা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি স্থান থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কক্সবাজার এলাকার একাধিক এজেন্টের কাছে টাকা পাঠানো হয়েছে। পরে সেগুলো ক্যাশ আউট হয়েছে। এ ধরনের লেনদেন সন্দেহজনক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি টাকার লেনদেনের কারণে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়। এ ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন জঙ্গি অর্থায়নেও ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সূত্র জানায়, মোবাইল এসএমএস ছাড়াও প্রতিটি লেনদেনের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টধারী গ্রাহককে রসিদ দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা যায় কি-না, তাও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেনের প্রতিটি পর্যায়ে রেকর্ড থাকে। ফলে এ ক্ষেত্রে অনিয়ম কিংবা সন্দেহজনক লেনদেনের ঝুঁকি নেই। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যাচাইয়ের মাধ্যমে সিমকার্ড নিবন্ধন করার কারণে অ্যাকাউন্টধারী গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করাও সহজ হয়েছে। কিন্তু এজেন্টের মাধ্যমেই অনিয়মের ঝুঁকি এবং সন্দেহজনক কিংবা অনিয়মের মাধ্যমে লেনদেনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এজেন্টদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নিজস্ব নিয়মে নজর রাখছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে এজেন্টের নিবন্ধন বাতিল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন নজরদারি কঠোর হওয়ার কারণে সন্দেহজনক লেনদেন কমবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages