জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সস (জিএসপি) সুবিধা বাতিল হলে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য অনিশ্চয়তায় পড়বে।
ফলে, দেশের রফতানি বাণিজ্য অনেকটাই সংকটের মধ্যে পড়বে বলে জানা গেছে। ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে বৈদেশিক লেনদেন। রফতানি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনই পূর্বাভাস পাওয়া গেছে।
তাজরীন ফ্যাশানসে অগ্নিকাণ্ডের পর পরই পোশাকশিল্প মালিকরা বলেছিলেন, পোশাকশিল্প যেহেতু জিএসপি সুবিধার অন্তর্ভুক্ত নয়, সেহেতু এ সুবিধা বাতিল হলেও তার তেমন কোনো প্রভাব এ খাতে পড়বে না।
তবে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের প্রাণহাণির ঘটনার পর যখন জিএসপি সুবিধা নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়, তখন নড়েচড়ে বসেছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। ইতোমধ্যেই, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) শক্ত মনোভাব দেখিয়েছে এ ঘটনার পর।
এদিকে, বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকখাতের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মোট রফতানির প্রায় ৬০ শতাংশের ক্রেতা ইউরোপীয় দেশগুলো।
আর জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে এসব দেশের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। ফলে, আর ক্রেতাদের আগের মতো সাড়া পাওয়া যাবে না। এতে করে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম বাংলানিউজকে বলেন, “পোশাকশিল্পের বড় ক্রেতা হলো- ইউরোপ। সেক্ষেত্রে যদি জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়, তাহলে ক্রেতারা আমাদের দেশের কর্মপরিবেশসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলবে। তখন পোশাকশিল্প জিএসপি সুবিধার বাইরে থাকলেও তা আমলে নেবে না। এ ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে করে জিএসপি সুবিধা বাতিল না হয়।”
অন্যদিকে, অনুন্নত দেশ (এলডিসিভুক্ত) দেশগুলোর শুল্কমুক্ত পোশাক রফতানির যে সুবিধা বাংলাদেশের পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাও হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন এই নেতা।
এফবিসিসিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৩৯ হাজার ২শ কোটি টাকার (৪৯ কোটি ডলার) পণ্য ইউরোপে রফতানি করা হয়, যার মধ্যে সরাসরি জিএসপি সুবিধার মধ্যে রফতানি হয় প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার পণ্য।
এটি ইউরোপিয় ইউনিয়ন দেশে রফতানির শূন্য দশমিক ৫৪ ভাগ হলেও এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে সে দেশে বাংলাদেশি রফতানির পুরো অংশে। আর সে ক্ষেত্রে যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য এফবিসিসিআই কাজ করছে বলে জানা যায় সংগঠনটির সূত্র থেকে।
এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, “জিএসপি সুবিধা বাদ হলে তার প্রভাব দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক! আর এটি দেশের জন্য কখনোই কল্যাণকর হবে না।”
তিনি বলেন, “এফবিসিসিআই থেকে জিএসপি সুবিধা বলবৎ রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, আমরা তা করবো।”
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, আগামী ২৮ মে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধার শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে একটি দল সেখানে গেছে। এর আগে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডে একশ ১১ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার পর শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে-এ মর্মে আমেরিকান ফেডারেল অব লেবার কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) অভিযোগ করে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) কাছে।
এ অভিযোগের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, গত মার্চ মাসে। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের যে দলটি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল, তাদের ১৯টি প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়। এ সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে ২৪ এপ্রিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব উৎকণ্ঠা ছিল, সে সব বিষয়ে দেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়, এমন উত্তরই দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাস বা জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে জিএসপি সুবিধা রাখা হবে নাকি বাতিল করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
No comments:
Post a Comment