মানুষের আর্থিক সক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে গাড়ির চাহিদা। এই অবস্থায় বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে গ্রাহকদের গাড়ি কেনার ঋণ দিতে। সব মিলিয়ে গাড়িকেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যবসায়ের বিকাশ ঘটছে। গাড়ি নিয়ে আজকের এই বিশেষ আয়োজন
সাড়ে পাঁচ বছরে ব্যক্তিগত গাড়ি বেড়েছে সোয়া লাখ
দেশে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে গাড়ির ব্যবসাও। এক দশক আগেও দেশে নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বিক্রয়কেন্দ্র বা শোরুম ছিল। এসব শোরুমের বেশির ভাগই ছিল নয়াপল্টন-বিজয়নগর এলাকায়। এখন এসব শোরুমের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রগতি সরণিতে গেলেই চোখে পড়ে নতুন নতুন শোরুম। আবার তেজগাঁও লিংক রোডে আছে অনেকগুলো নতুন গাড়ির শোরুম।
শোরুমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এখন গাড়ি কিনতে ঋণ দিচ্ছে। এর ফলে বিক্রি বাড়ছে গাড়ির।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে প্রাইভেট কার, জিপ ও মাইক্রোবাস—এই তিন ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৯৫। বর্তমানে আছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫টি। তার মানে গত সাড়ে পাঁচ বছরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৬০টি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। বিআরটিএ ২০ ধরনের যানবাহনের হিসাব সংরক্ষণ করে। এর মধ্যে কার, জিপ (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল-এসইউভি) ও মাইক্রোবাসকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া বাস-ট্রাকসহ অন্য যানবাহনগুলো বাণিজ্যিক যানের আওতাভুক্ত।
বিআরটিএর তথ্য অনুসারে, বর্তমানে সারা দেশে মোটরযানের সংখ্যা ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৫৪৬টি। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশই মোটরসাইকেল। এখন ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৭টি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত আছে। শুধু গত বছরই ২ লাখ ৪০ হাজার মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে।
তার পরেই আছে প্রাইভেট কার। বর্তমানে ৩ লাখ ৯৭৩টি প্রাইভেট কার নিবন্ধিত আছে। ২০১১ সালে ১২ হাজার ৯৫০টি প্রাইভেট কার নিবন্ধিত হয়। পরের দুই বছর একটু কম হলেও ২০১৪ সাল থেকে আবার বাড়ছে। গত বছর ২১ হাজার ৬২ প্রাইভেট কার নিবন্ধিত হয়। আর চলতি বছরের গত জুলাই পর্যন্ত ১২ হাজার ৭৩৬টি প্রাইভেট কার নিবন্ধিত হয়েছে। মাইক্রোবাস ও জিপের সংখ্যাও বাড়ছে। এখন দেশে নিবন্ধিত ৮৯ হাজার ২৩৩টি মাইক্রোবাস ও ৪৫ হাজার ৮৪৯টি জিপ আছে।
সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গাড়ি ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, নিবন্ধন নেওয়া ব্যক্তিগত গাড়ির মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই রিকন্ডিশন্ড বা পুরোনো (জাপানে একবার ব্যবহৃত)। তবে বিআরটিএর কর্মকর্তারা মনে করেন, এই সংখ্যা ৭৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচটি অর্থবছরে ৬৭ হাজার ৭২৩টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৩০০ গাড়ি আমদানি হয়। অবশ্য ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩২ হাজার ২২৫টির মতো রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছিল।
ঢাকার গাড়ি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে রিকন্ডিশন্ড সিডান কারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসছে টয়োটা প্রিমিও, টয়োটা এলিেয়ন, টয়োটা এক্সিও ও টয়োটা করলা ফিল্ডার। এসবের দাম ১৬ থেকে ৩০ লাখ টাকা। মাইক্রোবাসের মধ্যে আসছে টয়োটা হাইয়েস, টয়োটা নোয়া ও টয়োটা লাইটেস। এসবের দাম ১১ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা। জিপের (এসইউভি) মধ্যে বেশি চলছে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা প্রাডো, নিশান এক্সটেইল, মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার ও হোন্ডা সিআরভি।
জানতে চাইলে বারভিডার সভাপতি আবদুল হামিদ শরীফ বলেন, ‘জাপানের গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো প্রথমে নিজেদের জন্য আপডেট প্রযুক্তির গাড়ি তৈরি করে। সেসব গাড়ি অন্তত তিন বছর পর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন হয়। মূলত সেই আপডেট প্রযুক্তির গাড়িগুলোই রিকন্ডিশন্ড হিসেবে আমদানি হয়। এসব গাড়ি আমাদের দেশের পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে গেছে।’
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের উদ্দেশে আবদুল হামিদের পরামর্শ হচ্ছে, জাপানে গাড়িটি একাধিক ব্যক্তি কিংবা রেন্ট-এ-কারের প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন কিংবা গাড়ির দুর্ঘটনাজনিত কোনো ইতিহাস থাকলে সেটি কেনা ঠিক হবে না। কারণ, এসব সমস্যা থাকলে গাড়ির ইঞ্জিন ত্রুটিযুক্ত হতে পারে। সে জন্য বিষয় দুটি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।



No comments:
Post a Comment