হযরত বিলাল রা.-এর ইসলাম গ্রহণ ও নির্যাতন ভোগ করুন কাহিনী : যা জানা সবার প্রয়োজন - সময়ের প্রতিধ্বনি

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Saturday, August 27, 2016

হযরত বিলাল রা.-এর ইসলাম গ্রহণ ও নির্যাতন ভোগ করুন কাহিনী : যা জানা সবার প্রয়োজন


হযরত বিলাল রা. হাবস দেশীয় ইথিওপিয়ার একজন অতি প্রসিদ্ধ সাহাবী ছিলেন। তিনি মদীনার ‘মসজিদে নববীর’ মুয়াযযিন ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অতি প্রিয়পাত্র ছিলেন।

তিনি প্রথমে এক কাফিরের গোলাম ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁহার মনিব উমাইয়া বিন খালাফ তাঁহাকে নানা উপায়ে নির্যাতন করিতে লাগিল। উমাইয়া ছিল ইসলামের মহাশত্রু। সে নিজের ভৃত্য হযরত বিলালকে ইসলাম ত্যাগ করাইতে অতি কঠোর ও নির্মম শাস্তির ব্যবস্থা করিয়াছিল। দ্বিপ্রহরের অগ্নিপ্রায় রৌদ্রের মধ্যে অতি তপ্ত বালুকার উপর সে হযরত বিলালকে চিৎ করিয়া শোয়াইয়া তাঁহার বুকের উপর একটা মস্ত বড় পাথর চাপাইয়া দিত। ইহার ভারে হযরত বিলাল একটুও নড়িতে পারিতেন না। উপরে আগুনের মত সূর্যের তাপ, নিচে আগুনের মত বালু। এইরূপ নিষ্ঠুর অত্যাচার করিবার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, হয়ত তিনি মরিয়া যাইবেন, না হয় ইসলাম ত্যাগ করিবেন। কিন্তু এমন নিমর্ম যাতনার চাপে তিনি কখনও আল্লাহকে ভুলেন নাই। ওষ্ঠাগতগ্রাণ, প্রেমের সাধক দুর্বিষহ যন্ত্রণায় ছটফট করিতে করিতে মাঝে মাঝে চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিতেন,“আহাদ”, “আহাদ”, অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবুদ নাই।
রাত্রিতেও তাঁহার শান্তি ছিল না। তখন তাঁহাকে বেত মারা হইত, ফলে পূর্বদিনের জখমগুলি আরও তাজা হইয়া উঠিত। পরে তাঁহাকে যখন আবার তপ্ত বালুকার উপর শোয়াইয়া দেওয়া হইত, তখন তাঁহার যখম হইতে শতধারায় রক্ত ও চর্বি গলিয়া পড়িতে থাকিত। মাঝে মাঝে মক্কার বালক দলের হাতে তাঁহাকে ন্যস্ত করা হইত। তাহারা তাঁহার গলায় রজ্জু বাঁধিয়া তাঁহাকে মক্কার রাজপথে সমস্ত দিন হেঁচড়াইয়া টানিয়া বেড়াইত এবং সন্ধ্যার সময় মৃতপ্রায় অবস্থায় তাঁহাকে বাড়ি ফিরাইয়া আনিত।
শুধু তাঁহার মনিবই তাঁহাকে নির্যাতন করিত না; কখনও আবু জেহেল, কখনও উমাইয়া আবার কখনও অন্য কাফিররা আসিয়াও তাঁহাকে পালা করিয়া অত্যাচার করিত। কিন্তু এত অত্যাচার, এত নিগ্রহের পরও তিনি কোনদিন তাঁহার “আহাদ”-কে ভুলেন নাই।
হযরত আবুবকর সিদ্দিক রা.তাঁহাকে এই অবস্থায় দেখিতে পাইয়া বহু অর্থ দ্বারা খরিদ করিয়া লইয়া যান এবং অবশেষে আযাদ করিয়া দেন।
আরবের পৌত্তলিকরা তাহাদের মূর্তিগুলিকে নিজেদের মা’বুদ বলিয়া মান্য করিত। ইসলামের তাওহীদ বাণী তাহাদের ধর্মবিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করিয়াছিল। সেই জন্যই হযরত বিলাল রা.-কে ইসলামচ্যুত করিতে তাহাদের এত আগ্রহ ও এত মাথাব্যাথা কিন্তু তওহীদের উপাসক, ইসলামের পবিত্র আমানতদার হযরত বিলাল শত্রুর সহস্র নির্যাতন উপেক্ষা করিয়াও আল্লাহর একত্বকে মানুষের সম্মুখে অমলিন অবস্থায় রক্ষা করিয়াছেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তেকালের পর হযরত বিলাল রা.মদীনায় আর থাকিতে পারিলেন না। নবী শূন্য মদীনায় তিনি কেমন করিয়া থাকিবেন? কাহাকে শোনাইবেন তাঁহার মধুর আজান ধ্বনি শোকে, দুঃখে বিচ্ছেদে তিনি একদিন মদীনা ত্যাগ করিয়া জেহাদে জীবনপাত করিবার জন্য দূরদেশে চলিয়া গেলেন।
বহুদিন পর্যন্ত তিনি আর মদীনায় ফিরিলেন না। একদিন স্বপ্নে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনিলেন, “বিলাল, কি রকম জুলুম? তুমি যে আর আমার নিকট আস না?” স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেলÑ প্রেমিকের মনে প্রেমের বান ডাকিল। ভোর হইতে না হইতেই তিনি মদীনার পানে ছুটিলেন এবং যথাসময়ে নবীর দরবারে আসিয়া হাজির হইলেন।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশধর হযরত হাসান ও হুসায়েন রা.তাঁহাদের অতি প্রিয় বিলালকে দেখিয়া যেন হারানো বস্তু ফিরিয়া পাইলেন। তাঁহারা তাঁহার আজানÑনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আর বাঁচিয়া নাই! কিন্তু নবী-বংশধরের অনুরোধ উপেক্ষা করাও মুশকিল।
অগত্যা মিনাকে উঠিয়া তিনি উদাত্ত কন্ঠে তওহীদের মধুর বাণী চারিদিকে ঘোষণা করিয়া দিলেন।
বিলালী আজানের মধুর স্বর মদীনার আকাশ-বাতাস মুখরিত করিয়া দিগ-দিগন্তে ছড়াইয়া পড়িল। মদীনার নরনারী তাহাদের চিরপরিচিত স্বর শুনিয়া রোদন করিতে করিতে মসজিদের দিকে ছুটিলেন। সেখানে হযরত বিলালকে দেখিয়া তাঁহাদের নবী-শোক যেন হাজার গুণ বর্ধিত হইয়া উথলিয়া উঠিল।
কিছুদিন মদীনায় বাস করিবার পর বিলাল রা.স্বীয় বাসস্থান দামেশকে চলিয়া গেলেন এবং ২০ হিজরীতে সেখানেই ইন্তিকাল করেন।
৫ হযরত আবু যর গিফারী রা.-এর কথা
হযরত আবু যর গিফারী রা.একজন সাহাবী ছিলেন। আলিম এবং দরবেশ হিসাবেও তিনি যথেষ্ট প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। হযরত আলী রা.বলেন, আবু যর গিফারী রা.এমন গভীর বিদ্যা অর্জন করিয়াছিলেন যে, অনেক লোকই তাহা আয়ত্ত করিতে অক্ষম। তিনি তাঁহার গভীর পা-িত্য কখনও কাহারও নিকট প্রদর্শন করিতেন না। তিনি নিজের জ্ঞানের আলো বিনয় এবং নম্রতার আবরণ দিয়া সর্বদা ঢাকিয়া রাখিতেন।
তাঁহার নিকট নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুয়ত প্রাপ্তির সংবাদ পছিলে তিনি তাঁহার ভাইকে মক্কায় পাঠাইলেন। যিনি নবুয়তের দাবি করেন, যাঁহার নিকট ওহী আসে এবং যিনি আসমানের খবর পান, তিনি কেমন লোক, তাঁহার চরিত্র কেমন, তিনি কি কি কথা বলেন, তাঁহার আচার-ব্যবহার কেমন, তাহা জানিবার জন্য তিনি তাঁহার ভাইকে পাঠাইয়া দিলেন।
তাঁহার ভাই মক্কা হইতে ফিরিয়া গিয়া হযরত আবু যরকে বলিলেন, “আমি লোকটিকে সৎকথা বলিতে, সদাচার করিতে এবং পবিত্রতা অর্জন করিতে মানুষকে আদেশ দিতে শুনিয়াছি। আমি তাঁহার এমন একটি কথা শুনিয়াছি, যাহা কোন ভবিষ্যদ্বাণীও নহে, কোন কবির কাব্যও নহে।”
ভ্রাতার কথায় হযরত আবু যর গিফারীর মন শান্ত হইল না। সরাসরি সব কিছু জানিবার জন্য তিনি মক্কা রওয়ানা হইলেন এবং সেখানে উপস্থিত হইয়া সোজা কাবাগৃহে প্রবেশ করিলেন। তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনিতে পারিলেন না, অন্য কাহাকে জিজ্ঞাসা করাও সমীচীন মনে করিলেন না।
সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি ঐ অবস্থায়ই রহিলেন। সন্ধ্যার পর হযরত আলী রা.দেখিলেন যে, একজন বিদেশী মুসাফির মসজিদে অবস্থান করিতেছেন। মুসাফিরদের তত্ত্বাবধান করিবার ভার তাঁহার উপরই ন্যস্ত ছিল। কাজেই তিনি হযরত আবু যর গিফারীকে ডাকিয়া আনিয়া নিজের বাড়িতে খাওয়াইলেন এবং রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। তিনি খাওয়া-দাওয়া শেষ করিয়া শুইয়া পড়িলেন, নিজের পরিচয় এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্য কাহাকেও বলিলেন না।
সকালে উঠিয়া তিনি আবার মসজিদে চলিয়া গেলেন এবং সমস্ত দিন তথায় রহিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজেও চিনিতে পারিলেন না, কাহারও নিকট জিজ্ঞাসাও করিলেন না। সন্ধ্যার পর হযরত আলী রা.তাঁহাকে আবার নিজের বাড়িতে লইয়া গিয়া যথারীতি আতিথেয়তা করিলেন। মুসাফির আজও নিজের পরিচয় গোপন রাখিলেন এবং হযরত আলী রা.ও তাঁহাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিলেন না।
ভোরে উঠিয়া হযরত আবু যর গিফারী রা.পুনরায় মসজিদে চলিয়া গেলেন। আজও তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনিতে পারিলেন না। কাহাকে জিজ্ঞাসা করিতেও সাহস করিলেন না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহিত মেলামেশা করা বা তাঁহার সান্নিধ্য বা সাহচর্য তালাশ করা ঐ সময় বড় বিপজ্জনক ছিল। কারণ পাছে কেহ মুসলমান হইয়া যায়, সেই জন্য কাফিররা সকলের প্রতি অতিশয় সতর্ক দৃষ্টি রাখিত। ইসলামের প্রতি বা উহার প্রবর্তক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কাহারও বিন্দুমাত্র অনুরাগ প্রকাশ পাইলেই তাহার আর নিস্তার ছিল না। বিধর্মীরা অত্যাচার ও নির্যাতনে ইসলামানুরাগী লোকটিকে একেবারে জর্জরিত করিয়া ফেলিত। হযরত আবু যর গিফারী সেই জন্যই নিজের পরিচয় গোপন রাখিয়াছিলেন।
তৃতীয় দিনও তাহাই ঘটিল; কিন্তু হযরত আলী রা.আহারাদি করাইয়া শুইবার পূর্বে তাঁহাকে মক্কায় আসার উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করিলেন।
হযরত আবু যর গিফারী হযরত আলীকে প্রথমে সঠিক সংবাদ বলিবার জন্য শপথ করাইলেন, তৎপর নিজের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করিলেন।
হযরত আলী রা.তাঁহার বক্তব্য শুনিয়া বলিলেন, “তিনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল। কাল সকালে আমি যখন মসজিদে রওয়ানা হইব, তখন আপনিও আমার অনুসরণ করিবেন; কিন্তু সাবধান! কেহ যেন জানতে না পারে যে, আপনি আমার সঙ্গী। রাস্তায় যদি কোন শত্রু সামনে পড়ে তবে আমি হয়ত প্রস্রাব করিতে বা জুতার ফিতা বাঁধিতে বসিয়া পড়িব, আপনি তখন আমার অপেক্ষা না করিয়া সোজা চলিতে থাকিবেন এবং স্বভাব বুঝাইয়া দিবেন যে, আপনি আমার সঙ্গী নন বা আপনার ও আমার উদ্দেশ্য এক নয়।”
ভোরে উঠিয়া হযরত আলী রা.মসজিদের দিকে যাত্রা করিলেন। হযরত আবু যর গিফারীও তাঁহার পিছে পিছে যাইতে লাগিলেন। যথাসময়ে নবী করীম সাল্লাল্লাম আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হইয়া তাঁহার কথাবার্তা মনোযোগ দিয়া শ্রবণ করিলেন। সত্যান্বেষী প্রাণ সত্যের আহ্বান শুনিয়া কখন স্থির থাকিতে পারে না। হযরত আবু যরের পিপাসিত প্রাণও সত্যের অমৃত সুধা পান করিয়া এক মুহূর্তেও স্থির থাকিতে পারিল না। তিনি ঐখানে বসিয়াই ইসলাম গ্রহণ করিয়া অমর জীবন লাভ করিলেন।
অত্যাচার ও নির্যাতনের আশংকা করিয়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু যর গিফারী রা.-কে বলিলেন, “তোমার ইসলাম গ্রহণের কথাটা এখন গোপন করে রাখ এবং নীরবে বাড়ি চলিয়া যাও। মুসলমানদের আরও একটু প্রতিপত্তি এবং শক্তি সামর্থ্য হইলেই চলিয়া আসিও।”
হযরত আবু যর গিফারী বলিলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্! যাঁহার হাতে আমার প্রাণ, আমি সেই আল্লাহর শপথ করিয়া বলিতেছি, আমি তওহীদের মহাবাণী কলেমা শরীফ কাফিরদের মধ্যে গিয়া চেঁচাইয়া পাঠ করিব।”
এই কথা বলিয়া তিনি তৎক্ষণাত কাবাগৃহে প্রবেশ করিয়া অতি উচ্চৈস্বরে পাঠ করিলেন
অর্থাৎ, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিতেছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।
আর যায় কোথায়? চারিদিক হইতে কাফিররা ভীমরুলের মত ছুটির আসিয়া তাঁহার উপর পতিত হইল। মারপিট, অত্যাচার-অপমান যে কত করিল ইহার সীমা রহিল না। আঘাতে আঘাতে হযরত আবু যরের শরীর ক্ষত-বিক্ষত হইল। নিষ্ঠুরদের আঘাতে তাঁহার প্রাণবায়ু পর্যন্ত বহির্গত হইবার উপক্রম হইল।
ঐ সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা হযরত আব্বাস, যদিও তিনি তখনও মুসলিম হন নাই, তবুও মুমূর্ষু হযরত আবু যরের রক্ষার ঝাঁপাইয়া পড়িলেন এবং উš§ত্ত লোকদের বলিতে লাগিলেন, “কি সর্বনাশ সে যে গিফার গোত্রের লোক! শাম দেশের রাস্তাতেই যে তাঁহাদের বাসস্থান। তাহার মৃত্যু হইলে যে ঐ দেশের সহিত তোমাদের সমস্ত ব্যব-বাণিজ্যই বন্ধ হইয়া যাইবে। তাহাকে মারিয়া ফেলিলে তোমাদের সেখানে যাওয়ার আর কি কোন পথ থাকিবে?”
তাঁহার কথা শুনিয়া কাফিরদেরও চমক ভাঙ্গিল। তাহাদেরও মনে হইতে লাগিল, হযরত আব্বাস তো ঠিক কথাই বলিয়াছেন। শাম দেশ হইতেই তাহাদের সমুদয় প্রয়োজনীয় বস্তু আনা হয়। সে দেশের বাণিজ্যপথ বন্ধ হইলে তাহাদের বাস্তবিকই বিপদ হইবে। এই কথা ভাবিয়া তাহারা হযরত আবু যরের প্রতি অত্যাচার বন্ধ করিল।
পরের দিনও হযরত আবু যর গিফরী রা.কাবা শরীফে প্রবেশ করিয়া ঠিক পূর্বের ন্যায়ই কলেমা শাহদত পাঠ করিলেন; সেদিনও কাফিররা তাঁহাকে নির্যাতনে করিয়া মরণাপন্ন করিয়া তুলিল। সেদিনও হযরত আব্বাস তাহাদিগকে বুঝাইয়া শুনাইয়া হযরত আবু যরকে মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা করিলেন।
ইহাই সত্যিকার ঈমানদারের পরিচয়। ভয় নাই, সঙ্কোচ নাই, আল্লাহর প্রেমিক আল্লাহর পবিত্র নামের গুণকীর্তন করিতে, জাগতের বুকে তাহা প্রতিষ্ঠিত করিতে ইতর-ভদ্র নির্বিশেষে সকলের সম্মুখে তাহা প্রচার করিতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবোধ করেন নই। সেই জন্য হযরত আবু যর নবী করীম (সঃ)-এর নিষেধ সত্ত্বেও দ্বিধাহীন চিত্তে কাফিরদের কেন্দ্রে দাঁড়াইয়া আল্লাহর তওহীদবাণী উচ্চারণ করিতে পশ্চাদপদ হন নাই। হযরত আবু যর কাফিরদের নিষ্ঠুর অত্যাচার সহ্য করিতে পারিবেন না, এই ভয়েই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁহাকে ইসলাম গ্রহণের কথাটা গোপন রাখিতে আদেশ দিয়াছিলেন। তাহা না হইলে তওহীদের বাণী প্রচার করাতে তো নিষেধ করিবার কিছুই ছিল না। তিনি নিজেও তো সেই জন্য কত নির্যাতন, কত লাঞ্ছনা, কত অপমান ভোগ করিয়াছিলেন।
হযরত আবু যর ফুলশয্যায় শয়ন করিয়া কালাতিপাত করিবার লোভে ইসলাম গ্রহণ করেন নাই বা নিরাপদে মুসলমান হওয়ার বাহবা পাইবার আশাও করেন নাই; ইসলাম গ্রহণ করার কঠোরতম পরিণতিই যাহাতে সংঘটিত হয়, সেই পথই তিনি বাছিয়া লইলেন। তাঁহার ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন করিয়া বাড়ি চলিয়া গেলে কি কাফিরদের হাতে তিনি এত নির্যাতিত হইতেন? নিজের আরাম এবং শান্তির দিকে নজর না করিয়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শই গ্রহণ করিয়াছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধর্মের খাতিকে যদি কাফিরদের সহস্র অত্যাচার অমøান বদনে সহ্য করিতে পারেন, তবে তাঁহার উম্মত হইয়া, তাঁহার সাহাবী হইয়া তিনি কেন কাফিরদের নির্যাতনকে ভয় করিবেন? শুধু এই চিন্তাই পদে পদে তাঁহাকে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল, এই কল্পনাই তাঁহাকে প্রেরণা দিয়াছি
কলেমা শাহাদতে এক অদ্ভুত মোহিনী শক্তি বিদ্যমান। ঐকান্তিকভাবে উহা একবার পাঠ করিলে মানুষের মনে যে শক্তির সঞ্চার হয়, তাহার সম্মুখে জগতের শত অত্যাচার, শত জুলুম তৃণ-খ-ের মত ভাসিয়া যায়। তাই ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের জয়ডঙ্কা চতুর্দিকে বাজিয়া উঠিয়াছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠ কাফিররা মুষ্টিমেয় সাহাবাদের নিকট পরাজয়ে বরণ করিতে বাধ্য হইয়াছিল। আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা মুসলিম প্রাণে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের প্রেম উথলাইয়া উঠিলে পাহাড়-পবর্ত, দৈত্য-দানব, ভয়-ত্রাস, সুখ-দুঃখ অর্থাৎ সব কিছু যে তাহারা এক মুহূর্তে ধূলিসাৎ করিয়া দিতে পারে, তাহাতে বৈচিত্র্যের কিছুই নাই। ইহাই হইল সত্যিকার মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য, ইহাই হইল ইসলামের সত্যিকার রূপ।
৬ হযরত খাব্বাব রা. -এর করুণ কাহিনী
যে সকল মহাপ্রাণ সাহাবী আল্লাহর রাস্তায় নিজাদিগকে বিলাইয়া দিয়াছিলেন, যাঁহারা কাফিরদের নির্যাতনের অগ্নিপরীক্ষায় নিজদিগকে অকাতরে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, হযরত খাব্বাব রা.তাঁহাদের অন্যতম। পাঁচ-ছয় জন লোক মুসলমান হইবার পরেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন; কাজেই সুদীর্ঘ সময় তাঁহাকে কাফিরদের নির্যাতন ভোগ করিতে হইয়াছিল।
লৌহবর্ম পরিধান করাইয়া তাঁহাকে রৌদ্রে শোয়াইয়া রাখা হইত; ফলে তাঁহার শরীর হইতে ঘর্মধারা বহিতে থাকিত। অধিকাংশ সময় তাঁহাকে নগ্ন দেহে তপ্ত বালুকার উপর শোয়াইয়া রাখা হইত, যাহার ফলে তাঁহার কোমরের মাংস গলিয়া পড়িয়া গিয়াছিল।
তিনি এক কাফের স্ত্রীলোকের ক্রীতদাস ছিলেন। তাঁহার মনিব যখন জানিতে পারিল যে, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসা-যাওয়া করেন, তখন ঐ রমণী লোহা গরম করিয়া তাঁহার মাথায় দাগ দিতে লাগিল।
অনেক দিন পরে নিজ খিলাফতকালে হযরত ওমর তাঁহার নিকট হইতে তাঁহার নির্যাতন ভোগের বিস্তারিত বিবরণ জানিতে চাহেন। তখন হযরত খাব্বাব রা.বলেন, “আমার কোমর দেখুন!”
হযরত ওমর রা.তাঁহার কেমর দেখিয়া বলেন, “এমন কোমর তো আমি কোথাও দেখি নাই।
তখন হযরত খাব্বাব রা.বলিলেন, “আমাকে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শুয়াইয়া চাপিয়া ধরিয়া রাখা হইত, ফলে আমার চর্বি এবং রক্তে আগুন নিবিয়া যাইত।”
এমন নির্মম শাস্তি ভোগ করা সত্ত্বেও ইসলামের যখন শক্তি বৃদ্ধি হইল এবং মুসলমানদের বিজয়-তোরণ যখন খুলিয়া গেল, তখন তিনি রোদন করিয়া বলিতেন, “আল্লাহ্ না করুন! আমার কষ্টের পুরস্কার দুনিয়াতেই যেন লাভ না হয়।”
হযরত খাব্বাব রা.বলেন, “এক সময়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব দীর্ঘ সালাত আদায় করেন। সাধারণতঃ এত দীর্ঘ সালাত তাঁর অভ্যাস ছিল না। সাহাবাগণ এ সম্বন্ধে তাঁকে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন, ইহা ছিল খুব ভয় এবং ভক্তির সালাত। ঐ সালাতে আমি আল্লাহর নিকট তিনটি প্রার্থনা করিয়াছিলাম। আমার দুইটি দোয়া কবুল হইয়াছে এবং একটিকে নামঞ্জুর করা হইয়াছে। আমি দোয়া করিয়াছিলাম যে, আমার সমস্ত উম্মত যেন দুর্ভিক্ষে মরিয়া না যায়। আমার এই দোয়াটি কবুল হইয়াছে।
আমার দ্বিতীয় দোয়া এই ছিল যে, আমার উম্মতের উপর এমন শত্রু আপতিত না হউক যে তাহাদের সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করিয়া ফেলিবে। আমার এই প্রার্থনাও কবুল করা হইয়াছে।
আমার তৃতীয় দোয়া এই ছিল যে, আমার উম্মতের মধ্যে পরস্পর ঝগড়া-ফাসাদ না হউক আমার এই দোয়াটি কবুল হয় নাই।”
মাত্র ৩৬ বৎসর বয়সে হযরত খাব্বাবের মৃত্যু হয় এবং সাহাবাদের মধ্যে সর্বপ্রথম তিনিই কুফায় কবরস্থ হন। তাঁহার মৃত্যুর পর হযরত আলী রা.তাঁহার কবরের পাশ দিয়া যাইতে যাইতে বলিয়াছিলেন, “আল্লাহ্ খাব্বাবের উপর রহম করুন! তিনি নিজের খুশীতে মুসলমান হইয়াছিলেন, খুশীতে হিজরত করিয়াছিলেন। তিনি সমস্ত জীবন জেহাদের কাটাইয়া দিয়াছিলেন ও অশেষ নির্যাতন ভোগ করিয়াছিলেন। ঐ ব্যক্তিকে মোবারকবাদ, যিনি আখেরাতকে স্মরণ রাখেন এবং শেষ হিসাবের জন্য তৈয়ার হন; যিনি জীবনাযাপনের উপযোগী স্বল্প ধন-সম্পদে লইয়া সন্তুষ্ট থাকিয়া নিজের প্রভুকে রাজি রাখিবার চেষ্টা করেন।
৭. হযরত আম্মার রা. এবং তাঁহার মাতাপিতার ঘটনা
হযরত আম্মার রা. এবং তাঁহার মাতাপিতা কাফিরদের হাতে অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করিয়াছিলেন। মক্কার উত্তপ্ত মরু বালুকার উপর শোয়াইয়া তাঁহাকে শাস্তি দেওয়া হইত। কোন কোন সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আম্মারের পাশ দিয়া যাইবার সময় তাঁহাকে সবর করিতে উপদেশ দিতেন এবং বেহেশতের সুসংবাদ দিয়া সান্ত¡না দান করিতেন। তাঁহার পিতা হযরত ইয়াসির কাফিরদের নির্যাতনে জর্জরিত হইয়া অবশেষে প্রাণত্যাগ করিলেন এবং তাঁহার মাতা হযরত সুমাইয়া নৃশংসতম অত্যাচার সহ্য করিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হন। প্রাণহীন, হিংস্র আবু জেহেল তাঁহার লজ্জাস্থানে একটি বর্শা দ্বারা আঘাত করে এবং সেই আঘাতেই তিনি শাহাদত বরণ করেন।
এত নির্যাতন সত্ত্বেও তাঁহারা তওহীদের মধুর বাণী কখনও ভুলেন নাই এবং ইসলাম পরিত্যাগ করিয়া নিজের সুখ-শান্তি ক্রয় করিবার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করেন নাই। হযরত সুমাইয় ইসলামের প্রথম শহীদ এবং হযরত আম্মার ইসলামের প্রথম মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, “হুজুর! আপনার জন্য একটা ছায়াযুক্ত স্থান তৈয়ার করা উচিত, যেখানে আপনি রৌদ্রের সময় বিশ্রাম করিতে ও সালাত কায়েম করিতে পারিবেন।”
এই কথার পর হযরত আম্মার রা.নিজেই কতকগুলি নুড়ি পাথর সংগ্রহ করিয়া কুবা নামক পল্লীতে একটি মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করিয়াছিলেন।
হযরত আম্মার রা.ঐকান্তিক আগ্রহের সহিত জেহাদে যোগ দিতেন। একবার তিনি অতিশয় আনন্দের সহিত বলিতেছিলেন, “এখন গিয়া বন্ধুদের সহিত এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁহার জামাতের সহিত মিলিত হইব”Ñএই কথা বলিতে তাঁহার তীব্র পিপাসা লাগায় তিনি কাহারও নিকট পানি চাহিলেন। ঐ ব্যক্তি তাঁহাকে একটু দুধ আনিয়া দিলেন। দুধ পান করিয়া তিনি বলিতে লাগিলেন, “আমি নবী করীম (সঃ)-এর নিকট শুনিয়াছি যে, তুমি দুনিয়াতে শেষ বস্তু হিসাবে দুধ পান করিবে।” এই কথা বলিয়াই তিনি শহীদ হইয়া গেলেন। মৃত্যুর সময় তাঁহার বয়স হইয়াছিল ৯৪ বৎসর।
৮ হযরত শোয়ায়েব রা.-এর ঘটনা
হযরত সোয়ায়েবও হযরত আম্মার-এর সহিত একত্রে মুসলমান হইয়াছিলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী আরকাম রা.-এর বাড়ীতে অবস্থান করিতেছিলেন। এমন সময় উক্ত সাহাবীদ্বয় পৃথক পৃথকভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাজিার হইলেন এবং বাড়ির দরজার কাছে উভয়ের সাক্ষাত হইয়া গেল। একটু কথাবার্তার পরেই জানা গেল যে, দুইজনের উদ্দেশ্য এক। দুইজনেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহিত সাক্ষাত করিয় ইসলাম গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক।
বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করিয়া তাঁহারা যথারীতি ইসলাম গ্রহণ করিলেন এবং তারপর হইতেই তাঁহাদের উপর চলিতে থাকে লোমহর্ষক অত্যাচার। কত প্রকারে, কত নৃশংসভাবে যে তাঁহাদিগকে নির্যাতিত করা হইয়াছিল, তাহা বর্ণনা করিয়া শেষ করা যায় না। অবশেষে বাধ্য হইয়া তাঁহারা হিজরত করিতে মনস্থ করিলেন; কিন্তু ইহাও কাফিরদের মনঃপুত হইল না। অন্যত্র চলিয়া গিয়া তাঁহারা সুখ-শান্তিতে বাস করুক, ইহাও কাফিরদের সহ্য হইল না। কাজেই নবদীক্ষিত মুসলমানদের কাহারও হিজরতের সংবাদ পাইলেই কাফিররা তাঁহাকে কঠোরতম প্রদান করিত।
সুতরাং হযরত সোয়ায়েবের হিজরত করিবার সংকল্প জানিতে পারিয়া কাফিররা তাঁহার পিছু লাগিয়া গেল। একদল কাফির অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া তাঁহাকে ধরিতে গেল। তিনি তখন তুনীর হইতে তীর বাহির করিয়া রাখিতে লাগিলেন এবং বলিলেন,“শোন! তোমরা জান যে, আমি তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তীরন্দায। আমার হাতে একটি থাকা পর্যন্ত তোমাদের কেহই আমার নিকট আসিতে পারিবে না। তীর ফুরাইয়া গেলে তরবারির সাহায্য লইব এবং যতক্ষণ তরবারি হাতে থাকিবে, ততক্ষণ কেহই আমার নিকট আসিতে পারিবে না। তারপর তরবারিটি কোনক্রমে আমার হাতছাড়া হইয়া পড়িলে তোমরা আমাকে যা খুশী করিতে পার। সেজন্যই বলি, তোমরা যদি আমার প্রাণের পরিবর্তে আমার মাল গ্রহণ কর, তবে তোমাদিগকে আমার মালের সন্ধান বলিয়া দিতে পারি। ওসব মক্কাতে আছে। ইহা ব্যতীত আমার দুইটি দাসীও আছে, তাহাদেরও তোমরা লইয়া যাইতে পার।”
তাঁহার প্রস্তাবে কাফিররা সম্মত হইল এবং এমনি করিয়া হযরত সোয়ায়েব নিজের মাল দিয়া নিজকে মুক্ত করিয়াছিলেন। এই সম্বন্ধে আল্লাহতায়ালা বলেছেনÑ
অর্থাৎ, এমন লোকও আছে যাহারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য নিজের প্রাণ খরিদ করিয়া লয় এবং আল্লাহতায়ালা নিজের বান্দাদের উপর সবর্দাই দয়াশীল।”
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কুবা পল্লীতে অবস্থান করিতেছিলেন। হযরত সোহায়েবের অবস্থা বিবেচনা করিয়া তিনি বলিলেন, “বড় লাভের ব্যবসাই করিলে সোহায়েব।”
হযরত সোহায়েব রা.বলিলেন, “নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন খেজুর খাইতেছিলেন এবং আমার দিকে তাকাইতেছিলেন; তাহা দেখিয়া আমি তাঁহার সহিত খাইতে বসিয়া পড়িলাম।”
তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, “চোখের রোগে ভুগিতেছ আবার খেজুরও খাইতেছ! দেখিতেছ কেমন করিয়া?”
হযরত সোহায়েব বলিলেন, “হুজুর! যে চোখটি ভাল, তাহা দিয়াই দেখিয়া খাইতেছি।” তাঁহার উত্তর শুনিয়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈষৎ হাসিয়া উঠিলেন।
হযরত সোয়ায়েব খুব অমিতব্যয়ী ছিলেন। তিনি এত অধিক খরচ করিতেন যে, একদিন হযরত ওমর তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, “তুমি বড় বেহুদা খরচ কর।” তখন তিনি উত্তর করিয়াছিলেন, “আমি অন্যায়ভাবে একটি পয়সাও খরচ করি না।” হযরত ওমর রা.-এর মৃত্যু উপস্থিত হইলে তিনি হযরত সোহায়েবকে তাঁহাকে জানাযার নামাজ পড়াইবার জন্য অসিয়ত করিয়া গিয়াছিলেন।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages